শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ
চন্দ্রমৌলি শিব : “অহং বেদ্মি”
Read in English
বৈকুণ্ঠ থেকেই ভজনের শুরু। সেইজন্যই শ্রীল রূপ গোস্বামিপাদ তাঁর উপদেশামৃতে ভজন-স্থান-নির্ণয়ার্থে লিখেছেন - “বৈকুণ্ঠাজ্জনিত বরা মধুপুরি”। বিরজা এবং ব্রহ্মলোকের উপরে বৈকুণ্ঠ। ব্রহ্মলোকের উপরে আর একটি নিত্যধাম আছে, যাঁর নাম কৈলাস। কৈলাস বৈষ্ণব-শ্রেষ্ঠ মহাদেবের ধাম। সেখানে তিনি শ্রীমতী পার্বতীদেবীর সঙ্গে অধিষ্ঠান করেন।
অনেকেই মহাদেবের উপাসনা করেন। দেবতা তথা অসুরগণও তাঁর আরাধানা করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজ-নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য। পুরাণাদিতে আমরা তার উদাহারণ পাই। শিবজীও অতি অল্পেই ও সহজেই সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন। সেইজন্য তাঁর এক নাম আশুতোষ। কিন্তু আমরা যদি স্ব-স্বার্থবশে ও জাগতিক সুখ সুবিধার জন্য বৈষ্ণবশ্রেষ্ঠ শম্ভূর পূজা করি তাহলে আমরা উপাসক নই, আমরা ব্যবসায়ী।
যাঁরা মহাদেবের নিষ্কপট উপাসনা করেন, সেই সব প্রকৃত শৈবগণকে তিনি অমায়ায় কৃপা করে শ্রীগোবিন্দের ভজনোপদেশ দান করেন। আমরা এইখানে সেইরকম একটি ঘটনার কথা বর্ণনা করার প্রচেষ্টা করব।
১৯৭০-এর দশকে এক শৈব-দম্পতি বজ্-বজ্- শহরে (দ্:২৪ পরগাণা জেলা) খুব সাধারণ ভাবে জীবন-যাপন করতেন। একদিন একজন বৈষ্ণব-ভিক্ষুক তাঁদের দুয়ারে ভিক্ষা করতে আসেন। তিনি লক্ষ্য করেন শৈব-দম্পতি তামস-তন্ত্রে শিবজীর উপাসনা করছেন। চন্দ্রমৌলি শিবের প্রতি তাঁদের একাগ্রতা ও নিঃস্বার্থ সেবা দেখে পরম প্রীত হন। ভিক্ষা গ্রহণ করে সেই বৈষ্ণব অনুগ্রহ-পূর্বক বলেন যে, শ্রীহরির সেবকগণের মধ্যে মহাদেব শ্রেষ্ঠ। তিনি স্বতন্ত্র ঈস্বর নন। স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করলে চন্দ্রমৌলি তাঁদের প্রতি অতি-প্রসন্ন হবেন।
এইকথা শুনে শৈব-দম্পতি কিছুটা বিমর্ষ হলেন। কারণ তাঁদের ধারণা ছিল তাঁদের উপাস্যই পরম-তত্ত্ব। তাঁদের উপাস্যদেবের উপরেও আর কোন পর-তত্ত্ব থাকতে পারেন - তা মানতে পারছিলেন না। বৈষ্ণব-ভিক্ষুকের কথাগুলি তাঁদের কানে অহরহ বাজতে থাকে ও হৃদয়ে একপ্রকার অস্থিরতা অনুভব করেন। তাঁরা শিবজীর নিকট অধিকতর করুণার জন্য প্রার্থনা করতে থাকেন, যাতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আরও গভীর হয়। কিছুদিন পর শ্রদ্ধেয়া সেই মহিলার স্বামী মহাদেবজী কে স্বপ্নে দর্শন করেন। চন্দ্রমৌলি নিশ্চয় করার জন্য বলেন যে, সেই বৈষ্ণব-ভিক্ষুকের কথা সত্য। তিনি বাস্তবিকই নিজেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করেন। তিনি সেই ভক্ত-যুগলকেও শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করতে আদেশ করেন। এবং সেই উদ্দেশ্যে কোন এক বৈষ্ণব-আচার্য্যের শ্রীচরণে আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেন।
শৈব-দম্পতি সেই দৈব-কথোপকথন আনন্দের সঙ্গে চিন্তা করতে থাকেন। তাঁরা শিবজীর আদেশ পালন করার জন্য চিত্তস্থির করলেন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব-আচার্য্যের সন্ধানে প্রবৃত্ত হলেন। পরিচিত বন্ধু-বান্ধবের নিকটে সেই বিষয়ে আলোচনা করতে থাকেন। তাঁরা জানতে পারলেন যে শ্রীকৃষ্ণভক্তগণ সচরাচর শ্রীবৃন্দাবন, শ্রীপুরুষোত্তম ও শ্রীমায়াপুর-আদি ধামে বসতি করেন। অনেক অনুসন্ধান ও বিচারের পর তাঁরা শ্রীবৃন্দাবনের রাগমার্গ-পথে ভজনশীল বিখ্যাত এক বাবাজীর নিকটে মন্ত্র-দীক্ষা নিতে মনস্থ করেন।
তদনন্তর, তাঁরা শ্রীবৃন্দাবন ধামে গমন করেন। সেই বাজাজী মহাশয়ের মন্দিরে গিয়ে একজন আখরাবাসীর নিকটে জানতে পারেন যে, বাবাজী মহারাজ তখন উত্তরবঙ্গে প্রচারে গিয়েছেন। তাঁরা সেখানে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। কয়েকদিন পর পতিতপাবন শিবের পুনরায় দর্শন লাভ করেন। চন্দ্রমৌলি শিবজী বলেন “তোমরা এখানে কেন? তোমরা শ্রীধাম মায়াপুরে যাও। সেখানে শ্রীচৈতন্যমঠে আচার্য্য শ্রীল ভক্তি কুসুম শ্রমণ গোস্বামী মহারাজের নিকটে দীক্ষা-আশ্রয় নাও।” পরদিন নিশান্তে, সেই দম্পতি শ্রীমায়াপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তাঁরা হাওড়ার ট্রেন ধরে শ্রীধামে পৌঁছান। শ্রীমায়াপুরে এসে শ্রীচৈতন্যমঠের সন্ধান করেন।
শ্রীচৈতন্যমঠে একনম্বর তোরণে প্রবেশ করে একজন বিশিষ্ট বৈষ্ণব সন্ন্যাসীর দর্শন পান। তাঁর নাম শ্রীল ভক্তি ভূষণ ভাগবত গোস্বামী মহারাজ। শ্রীল ভাগবত গোস্বামী মহারাজ কে তাঁদের আগমনের কারণ সম্বন্ধে সবিস্তারে অবহিত করলে, পূজ্যপাদ মহারাজ শৈব-দম্পতিকে শ্রীচৈতন্য মঠাচার্য্য শ্রীল ভক্তি কুসুম শ্রমণ গোস্বামী মহারাজের নিকটে নিয়ে যান। শিবজীর আদেশের কথা জানিয়ে সেই শৈব-দম্পতি শ্রীল শ্রমণ গোস্বামী মহারাজের শ্রীচরণে আশ্রয় ও দীক্ষা প্রার্থনা করেন। পরম ভাগবত মহাদেবের কৃপার কথা শুনে, শ্রীল শ্রমণ গোস্বামী মহারাজ জিজ্ঞাসা করলেন তাঁরা বৈষ্ণব-সম্প্রদায়ের নিয়ম-কানুন ও বিধি-নিষেধ পালন করতে পারবেন কিনা। শৈব-দম্পতি শাকাহারী ছিলেন। তাঁরা সম্পূর্ণরূপে আত্মনিবেদন করলেন। তাঁরা ছিলেন জটাধারী এবং লাল-বস্ত্র পরিহিত। জটা-আদি ত্যাগ, শুভ্র বসন গ্রহণ, কন্ঠে তুলসী-মালাধারণ ও গৌড়ীয়-তিলক-আদি রচনা করতে শুরু করলেন। শ্রীচৈতন্যমঠাচার্য্য শ্রীল শ্রমণ গোস্বামী মহারাজের নিকটে মন্ত্র-দীক্ষা গ্রহণ করে হরি-ভজনে প্রবৃত্ত হলেন। ১৯৮০-র দশকে অনেক মঠবাসী এই ভক্ত-দম্পতির সাক্ষাৎ পেয়ে, তাঁদের নিকটে চন্দ্রমৌলি শিবজীর নিষ্কপট কৃপার প্রসঙ্গ তথা শ্রীধাম ও শ্রীচৈতন্যমঠ-আশ্রয়ের কথা নিজমুখে শ্রবণ করেছেন।
শ্রীল ভক্তি কুসুম শ্রমণ গোস্বামী মহারাজ, আচার্য্য, শ্রীচৈতন্যমঠ
শ্রীচৈতন্যমৃত-চরিতামৃত-ধৃত শ্লোকে, শ্রীশিবজীর উক্তি - “শ্রীমদ্ভাগবতের গূঢ়ার্থ - আমি জানি, শুক জানেন, ব্যাস জানতেও পারেন আবার নাও জানতে পারেন। শ্রীমদ্ভাগবত ভক্তিতেই উপলব্ধি হয়, বুদ্ধি বা টীকার দ্বারা নয়।”
অহং বেদ্মি শুকো বেত্তি
ব্যাসো বেত্তি ন বেত্তি বা ।
ভক্ত্যা ভাগবতং গ্রাহ্যং
ন বুদ্ধ্যা ন চ টীকয়া ॥
ভাগবত দুই প্রকার। এক, শাস্ত্র-রূপে - গ্রন্থ-ভাগবত এবং দুই, ভক্ত-ভাগবত - শুদ্ধ ভক্ত। যিনি জীবনে ভাগবত-সিদ্ধান্ত-সমূহ পূর্ণ ও সুষ্ঠ-রূপে আচরণ করে প্রকাশিত করেন। শ্রীশিবজীর ন্যায় মহাবৈষ্ণব-ই কৃপা-পূর্বক গ্রন্থ-ভাগবতের প্রকৃত অর্থ হৃদয়ে প্রকাশিত করতে পারেন। আবার তিনি-ই ভক্ত-মহাভাগবতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন।
শ্রীচৈতন্য-ভাগবত-অনুসারে (মধ্য/৯/২৩৮):
বৈষ্ণব চিনিতে পারে কাহার শকতি।
আছয়ে সকল সিদ্ধি, দেখয়ে দুর্গতি॥
“মূঢ়জনগণ লৌকিক-জ্ঞানে প্রমত্ত হইয়া বৈষ্ণব চিনিতে পারে না। বৈষ্ণবের সকল সিদ্ধি করতলগত, কিন্তু তিনি সিদ্ধিগুলির প্রতি উদাসীন। সুতরাং মূঢ়-দর্শনে তিনি সর্ব্বতোভাবে দুর্গত ও ক্লিষ্ট বলিয়া লক্ষিত হন।” ( শ্রীগৌড়ীয়-ভাষ্য - প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর )
Śrī Śrī Guru-Gaurāṅgau Jayataḥ
Candra-mouli Śiva: “Ahaṃ Vedmi”
Read in Bengali
Bhajan starts from Vaikunṭha. That is why Śrīla Rūpa Gosvāmipāda writes in His Upadeśāmṛta - “vaikunṭhaj-janito varā madhu-puri ”. In His description of places of worship (bhajan-sthān), Śrīla Rūpa Gosvāmipada started from Vaikunṭha. Vaikunṭha is beyond Virajā and Brahmaloka. There is another planet, beyond Brahmaloka, which is Śiva-loka, named as Kailās. Kailās is the dhām of the best of the Vaiṣṇavas, Mahādeva jī. He resides there with Śrīmatī Pārvatī-devī.
It is seen that many people worship Mahādeva jī. Demigods and demons also worship Him. Most of such worshipers want to fulfill their personal desires. We find a lot of such references in Purāṇas. Besides, Mahādeva jī is very easily and quickly pleased. For that reason, His other name is Aśutoṣa. However, if we worship the greatest of the Vaiṣṇavas for our temporary and material gains, we are not His real devotees, but traders.
Those that worship Mahādeva without any duplicity, He bestows them with His real mercy and directs the true Śaivas to worship Śrī Govinda. We will try to provide an account of such true blessings of Śiva jī here.
In 1970’s a Śaiva couple used to live a very humble life in the city of Budge-Budge, (South-24-Parganas district) in the state of West Bengal, India. One day a Vaiṣṇava mendicant came to beg for alms at their door. The Vaiṣṇava noticed the couple were worshiping Mahādeva following tāmas-tantra. He was pleased noticing their dedication and selfless service to Śrī Candra-mouli Śiva jī. After accepting their alms, the mendicant gracefully commented that Mahādeva is the greatest among the servitors of Śrī Hari. He is not an independent God. Lord Śiva would be pleased if they would worship Śrī Kṛṣṇa, the Supreme Personality of Godhead.
Hearing this, the Śaiva couple was under temporary distress as they knew Śiva ji as the supreme Lord. They could not imagine there could be Anyone above their worshipable God. The words of the Vaiṣṇava mendicant continued to reverberate in their ears and caused an apparent unsettled heart-ache. They continued to pray to Śiva ji for more mercy and install stronger faith within them for Him. After a few days, the husband got the darṣan of Mahādeva in dreams. Lord Śiva confirmed that the Vaiṣṇava mendicant’s words are true indeed and He also worships His Lord, Śrī Kṛṣṇa. He commanded the couple to worship Śrī Kṛṣṇa. For that purpose, the couple were directed to take shelter at the lotus feet of a Vaiṣṇava Guru.
The Śaivas were cherishing the divine words of Śrī Śiva jī. They decided to follow His instructions and desired that they would search for the best of the Vaiṣṇava Ācaryas as their Guru. So they started inquiring from their friends asking where they can find a Vaiṣṇava Guru. They learned that the devotees of Kṛṣṇa primarily live in the holy places such as Śrī Vṛndāvan, Śrī Puruṣottam and Śrī Māyāpur. After intensive searches, they decided to go to Vṛndāvan and take initiation from a very famous bābāji, who follows rāgmārga.
Subsequently, they traveled to Śrī Vṛndāvan Dhām. When they reached the bābāji’s mission, they learned from a missionary that bābāji had gone to preach in the northern areas of Bengal for a month or so. They decided to wait there. In one of the following nights, they had the holy darśan of Śiva jī again. Candra-mouli Śiva asked “Why are you here? Instead, go to Śrī Caitanya Maṭh in Śrī Māyāpur and take initiation from the Ācārya Śrīla Bhakti Kusum Śramaṇ Gosvāmī Mahārāj.” The couple left for Śrī Māyāpur early in the morning. They took a train to Howrah and traveled to Śrī Dhām. Upon arriving at Śrī Māyāpur, they searched for Śrī Caitanya Maṭh as they had never been here.
After entering the temple boundary through Gate No. 1, they met a prominent Vaiṣṇava sannyāsī named Śrīla Bhakti Bhūṣaṇ Bhāgavata Mahāraj and disclosed their reason for coming there. Śrīla Bhāgavat Mahārāj took them to Śrīla Bhakti Kusum Śramaṇ Gosvāmī Mahārāj, the then presiding Ācārya of Śrī Caitanya Maṭh. The Śaiva couple prayed for shelter and initiation from Śrīla Śramaṇ Gosvāmī Mahārāj as per the order of Śrī Śiva jī. Hearing the blessings of Parama Bhāgavata Mahādeva, Śrīla Śramaṇ Gosvāmī Mahārāj asked if they would be able to accept and follow the strict rules and regulations of Vaiṣṇava lineage. The couple surrendered completely. They changed their red-cloth for a white one, shaved head and renounced the decades-old plaited and braided hair, accepted tulsī beads around the neck and decorated with Śrī Gauḍīya Vaiṣṇava tilaka. They were initiated by Śrīla Bhakti Kusum Śramaṇ Gosvāmī Mahāraj. During the 1980̍s many residents of the Maṭh had met this couple in person on several occasions and during festivals and used to hear the life-story related to receiving the un-deceitful blessings of Mahādeva jī and their sweet journey to Śrī Caitanya Maṭh, Śrī Māyāpur.
Śrīla Bhakti Kusum Śramaṇ Gosvāmī Mahārāj, Ācārya of Śrī Caitanya Maṭh
As quoted in Śrī Caitanya Caritāmṛta (Madhya/24/314), Śrī Śiva ji said - “I know, Śuka knows, Vyāsa may or may not know Śrīmad Bhāgavatam. Bhāgavata can be learned and perceived only by bhakti, devotional services, not by intelligence nor by imaginary commentaries.”
ahaṁ vedmi śuko vetti
vyāso vetti na vetti vā
bhaktyā bhāgavataṁ grāhyaṁ
na buddhyā na ca ṭīkayā
There are two types of Bhāgavata. One, the Granth Bhāgavata, Which is in the Scriptural form and the other, the Bhakta Bhāgavata, pure devotees, exemplifying the Scripture by practice. A great Vaiṣṇava such as Mahādeva can bestow mercy to perceive the Granth Bhāgavata and also help recognize the Bhakta Bhāgavata, a Vaiṣṇava Ācārya.
Śrī Caitanya Bhāgavata states (Madhya/9/238):
vaiṣṇava cinite pāre kāhār śakati
āchaye sakala siddhi, dekhaye durgati
Who has the ability to recognize a Vaiṣṇava? Foolish people maddened with worldly knowledge cannot recognize a Vaiṣṇava. All perfections are within the grip of a Vaiṣṇava, but he is indifferent to those perfections. Therefore in the vision of foolish people a Vaiṣṇava may appear to be completely distressed and afflicted. ( Śrī Gauḍīya-bhāṣya - Prabhupād Śrīla Sarasvatī Ṭhākur )