শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ
প্রভুপাদ - শ্রীনাম ও শ্রীনামী
শ্রীগৌড়ীয় গোষ্ঠীপতি শ্রীশ্রীগৌরসরস্বতী প্রভুপাদ
চিরগৌরজনাশ্রয়বিশ্বগুরুং
গুরুগৌরকিশোরকদাস্যপরম্।
পরমাদৃত ভক্তিবিনোদপদম্
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্॥
- শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর গোস্বামী মহারাজ
শ্রীমন্মহাপ্রভু
শ্রীব্রহ্মমাধ্ব-গৌড়ীয়-সম্প্রদায়ে যে কোনও ভক্ত যখন অত্যন্ত প্রীতির সহিত ’শ্রীমন্মহাপ্রভু’ এই নাম উচ্চারণ করেন তখন কাহাকে উদ্দেশ্য করিয়া থাকেন? আপনি যখন ‘মহাপ্রভু’ এই শ্রীনাম শ্রবণ করেন তখন কাঁহার শ্রীভাবমূর্ত্তি আপনার হৃদয়ে উদিত হন?
সমগ্র গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ অবশ্যই একবাক্যে উত্তর দিবেন - “কেন? কলিযুগ-পাবনাবতারী শচীনন্দন শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু!”
নিশ্চয়ই!
শ্রীল প্রভুপাদ
এখন যদি বৈষ্ণবগণ জয়ধ্বনি দিয়া কহেন - “জগদ্গুরু শ্রীল প্রভুপাদ কি জয়!” আপনাদিগের কাহারও মনে কি প্রশ্ন জাগিল - “কাঁহার জয়ধ্বনি দেওয়া হইল?” মহাপ্রভু নামের অনুরূপ প্রভুপাদ নামে একক শ্রীমূর্ত্তি আপনার হৃদয়ে আবির্ভূত হইলেন কি?
সকলের হৃদয়ে নামী শ্রীল প্রভুপাদ উদিত হয়েন না। বদ্ধজীব স্থান, কাল, পাত্রের উপর আপাত-অর্থে নির্ভরশীল। কে জয়ধ্বনি দিলেন? কোথায় জয়ধ্বনি দিলেন? সেই স্থলে শ্রোতারূপে কাঁহারা উপস্থিত ছিলেন? ইত্যাদি, ইত্যাদি। ইহাই কলির ধর্ম। অপ্রাকৃত শ্রীনামকে - প্রাকৃত জড়-স্থান-কাল-পাত্রের অধীন এইরূপ ধোঁয়াশা প্রস্তুত করিয়া দিবার কারিগর স্বয়ং কলি। ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের সূর্য্যপ্রভ প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের অপ্রাকৃত শ্রীনামকে মেঘ-কুজ্ঝটিকা দ্বারা ঢাকিয়া দেওয়া সম্বব নয়। প্রাকৃত বদ্ধজীব ইহাতে হতবুদ্ধি হইতে পারে মাত্র!
অপ্রাকৃত শ্রীনাম ও শ্রীনামী
আমাদিগের স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে জড় জগতে বস্তু ও বস্তুর নাম ভিন্ন। জড়বস্তুকে নাম প্রদান করা হয়। অতএব জড় জগতে বস্তু হইতে নাম সরাইয়া লওয়াও সম্ভব। কিন্তু অপ্রাকৃত জগতে শ্রীনাম ও শ্রীনামী অভিন্ন। অতএব শ্রীনামীকে শ্রীনাম হইতে পৃথক করা অসম্ভব। যাঁহারা ‘প্রভুপাদ’ এই শ্রীনামের অব্যবহার দ্বারা ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায় তথা শ্রীভক্তিবিনোদ-ধারার ধ্রুবতারা ও অধিপতি শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরকে অপসারণ করিবার অসৎ-অভিপ্রায়ে তাঁহারই কোনও এক শিষ্যকে সেই প্রভুপাদ-আসনে স্থাপন করিতে উদ্যত, তাঁহাদের সেই কার্য্যটি সম্পূর্ণ মায়িক উদ্যোগ। ইহা সম্প্রদায়-বিরোধী, প্রভুপাদ-বিগ্রহে সন্দেহ-আনয়নের অপচেষ্টা।
মেপে নেওয়ার ধর্ম ও সন্দেহ
কিন্তু বৈকুণ্ঠ্য জগতে ত সন্দেহের স্থান নাই! সন্দেহ জড়-জগতের বৈশিষ্ট্য। এই মায়িক জগতের অধিবাসী বদ্ধজীব-নিচয়ের মেপে নেওয়ার ধর্ম হইতে ‘সন্দেহ’ উত্থিত। একৈক বদ্ধ জীবের মনে সন্দেহের উৎপত্তিহেতু সমষ্টির বিচারে বিভ্রান্তির উদয়। বিভ্রান্তির মতবিন্যাসে যোগ দিয়া, সম্প্রদায় ত্যাগ করিয়া অতিবাড়ী অপসাম্প্রদায়িক দল-উপদলের সৃষ্টি। বিভ্রান্ত ও তত্ত্বজ্ঞান-বিবর্জ্জিত অপসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীসমুদয়ের মূল-সৎসম্প্রদায়ের প্রতি বিরোধ-অপরাধপূর্ণ দ্বন্দ্বে তাহাদের কলহের অবতারণা!
বিভ্রান্তি ও কলহ
কলহের অবতারণা - জীবের কলহে নিমজ্জন! ‘কলহ’ - কলির বিশেষত্ব। বদ্ধজীবের এই জগতে কলহ-উৎপাদনই ত কলির উদ্দেশ্য! কলহ-পরায়ণ বদ্ধজীব তাহাদের পরম উপাদেয় কলহ প্রাপ্ত হইলে পরমার্থ ত্যাগ করিবে - ইহাই স্বাভাবিক। বাঃ! কলি তুমি আপাততঃ ও বাহ্যতঃ সফল হইলে। অতঃপর বদ্ধজীব কলির দাস হইয়া কলির অতিবাড়ী-পরম্পরা গ্রহণ করিয়া জড়-ভোগানন্দময় মিছাভক্তির অনুষ্ঠানকেই গর্বের সহিত ভক্তিধর্ম বলিয়া ভ্রান্ত হইবে - ইহাতে ত কোনও বিচিত্রতা নাই! এই উদ্যোগের ফল বিভাজন। অপ্রাকৃত ত্যাগ করিয়া প্রাকৃত-বরণ। সম্প্রদায় পরিত্যাগ করিয়া অতিবাড়ী-অপসম্প্রদায় সৃষ্টি।
অপসম্প্রাদায়িক জীবকুল ও অশ্রদ্ধা
শ্রীরূপানুগ আচার্য্যবর্য্য প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের শ্রীনাম লইতে বর্তমান শ্রদ্ধাহীন ও সম্বন্ধ-জ্ঞানহীন জীবকুলের বড়ই অনীহা। এই অশ্রদ্ধা কেবল দুর্ভাগ্যজনক নহে, ইহা মহা-অপরাধ-জনক। কেহ বলেন “ভক্তিসিদ্ধান্ত মহারাজ”, কেহ বা কেবলমাত্র “ভক্তিসিদ্ধান্ত”! অনেক প্রেতাত্মার জিহ্বা ত প্রভুপাদ এই শ্রীনাম লইতে না পারিয়া নির্ব্বিকারই রহিয়া যায়। হে গৌড়ীয় ভক্তগণ, আপনারাই বলিতে পারিবেন - এই সম্বন্ধ-জ্ঞানের অভাবের এবং রূপানুগ-শ্রীভক্তিবিনোদ-ধারার মূলপুরুষ প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের প্রতি এই অবজ্ঞা, অপরাধ প্রবণতা ও আদরের কার্পণ্যের কারণ কী এবং ইহার প্রতিকার কিরূপে সম্ভব।
শুদ্ধভক্তকুলের জীবিতাশা
চিদানন্দময় ভক্তহৃদয় আলোকিত করিয়া করুণাঘনবিগ্রহ প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর সপার্ষদ বিরাজ করিবেন এবং সেবোন্মুখ জিহ্বায় তিনি ‘প্রভুপাদ’ শ্রীনাম-রূপে উদিত হইবেন - এই প্রার্থনা রাখি। কলির সাময়িক ও আপাত-জয় ব্যতিরেক-ভাবে অচিন্ত্য-নিত্য-তত্ত্বের প্রচারে সহায়ক হইবে!