শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ
এই আচার্য্যবৃন্দ কি আমাদের জন্য প্রচার করেছেন?
অর্বাচীনের দর্শন –
বর্তমানে একদল ব্যক্তি কোন বিশেষ বিশেষ আচার্য্যকে অধিক সম্মান প্রদান করার অভিপ্রায়ে অন্য বিশিষ্ট আচার্য্যবৃন্দের সম্বন্ধে অনধিকার চর্চায় প্রবৃত্ত হন। তাঁদের প্রশ্ন, “অন্যান্য আচার্য্যবৃন্দ আমাদের উদ্ধার লাভের জন্য কি প্রচারাদি করেছিলেন?” তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি, এই প্রশ্নটি কি বদ্ধজীবের অধিকারের অলিন্দ থেকে করছেন অথবা জীবোদ্ধার-রূপ-কার্যটিকে কে শ্রীহরি ও তাঁর সেবক-সম্প্রদায়ের কৃপা হিসাবে দেখছেন? আমাদের ন্যায় বদ্ধজীবের পক্ষে ভজনানন্দী বৈষ্ণবগণের আচার-প্রচারময় জীবনের বিচারক হতে চাওয়াটা অর্বাচীনতা ছাড়া আর কি-ই বা হতে পারে?
বিবিক্তানান্দী গুরুবর্গ –
শ্রীরূপানুগ গৌড়ীয়-গুরুবর্গগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতি অল্প-সংখ্যক অধিকারী ও ভজনানুসন্ধিৎসু শিক্ষানবিশ কে সঙ্গে নিয়ে অথবা প্রায় একাকী বিবিক্তানন্দী-রূপে ভজন করেছেন। শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজী মহারাজ, শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজী মহারাজ আদি আচার্য্য-শিরোমণিগণ প্রকৃষ্ট বিবিক্তানন্দীর উদাহরণ-স্বরূপ। শ্রীল বংশীদাস বাবাজী মহারাজ জনসঙ্গ থেকে দূরে থাকতে হুক্কা পানের অভিনয় করতেন। তাঁর অপ্রাকৃত ভজনস্থলীর আশেপাশে বাহ্যত মল-মূত্রাদি ত্যাগ করে ও প্রাকৃত দৃষ্টিতে অপরিষ্কৃত রেখে বঞ্চিতদের বঞ্চনা করতেন।
সিদ্ধ-মহাত্মা - শ্রীল বংশীদাস বাবাজী মহারাজ
নিম্নলিখিত শ্লোকানুসারে, - প্রলোভনাদিদ্বারা বহু শিষ্য সংগ্রহ, বহুশাস্ত্র-অভ্যাস, গ্রন্থব্যাখ্যাদ্বারা জীবিকা-অর্জন এবং আরম্ভ অর্থাৎ মঠাদি নির্মাণ - ভজনকারীর প্রয়োজনীয় বিষয় নয়।
শিষ্যান্নৈবানুবধ্নীয়াৎ গ্রন্থান্নৈবাভ্যসেদ্বহূন্।
ন ব্যাখ্যা মুপযুঞ্জীত নারম্ভানারভেৎ ক্বচিৎ॥
– শ্রীমদ্ভাগবতম্ / ৭ / ১৩ / ৮
প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর –
শ্রীরূপানুগ নবম-অধস্তন গৌড়ীয়-আচার্য্যকুল-চূড়ামণি প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরও প্রথম জীবনে বিবিক্তানন্দী ছিলেন।
প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
বিবিক্ত-ভজনানন্দী-রূপে শতকোটি নামযজ্ঞ পূর্ণ করার পর, প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর শ্রীপঞ্চতত্ত্ব ও শ্রীরাধাগোবিন্দের দ্বারা আদিষ্ট হ’য়ে গোষ্ঠ্যানন্দী-রূপে আত্ম-প্রকাশ ক’রে, শ্রীচৈতন্যমঠ ও তৎশাখা শ্রীগৌড়ীয় মঠ সমূহ স্থাপন ক’রে, আপামর জনসাধারণ কে শ্রীগৌরসুন্দর ও শ্রীরাধাবিনোদপ্রাণ জিউর ভজনের সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছেন। শ্রীল প্রভুপাদের শ্রীগৌড়ীয় মঠ পারমার্থিক প্রতিষ্ঠান। পতিতপাবন শ্রীগৌড়ীয় মঠকে যেন আমরা মায়িক আরম্ভ-হিসাবে দর্শনের ভ্রম না করি।
বিবিক্তানন্দী অথবা প্রচারক ?
শ্রীহরি সর্বতন্ত্র-স্বতন্ত্র এবং শ্রীহরির সেবক পরমবৈষ্ণবগণ কৃষ্ণেচ্ছা-পরতন্ত্র। তাঁরা সাক্ষাতে জীবোদ্ধার-কার্য করতেও পারেন আবার নিজ ভজনে মগ্নও থাকতে পারেন। তবে কোনও মহাবৈষ্ণব গোষ্ঠ্যানন্দী হন বা জগতে বিবিক্তানন্দীর ন্যায় অবস্থান করুন, তাঁরা স্বর্গের দেব-দেবী, প্রজাপতি, ঋষি ও মুনিবৃন্দ তথা সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং ব্রহ্মা জিউর আনন্দ-বর্ধক এবং পৃথিবীর শিরোমণি-স্বরূপ। ভূলোকে অথবা যে কোন লোকে মহাভাগবতের উপস্থিতি-ই, সে তিনি লোকশিক্ষার জন্য প্রচারাদির অনুষ্ঠান করুন বা না করুন, ব্রহ্মাণ্ডবাসী ও আমাদের ন্যায় বদ্ধজীবের চরম-মঙ্গলের কারণ-স্বরূপ হয়ে থাকেন।
দশম-অধস্তনের শ্রেষ্ঠত্ব –
প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের আশ্রিত বা আশ্রিতা, শ্রীরূপানুগ দশম-অধস্তন মহাবৈষ্ণবগণ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র যে বর্ণেই আবির্ভূত হন, ব্রহ্মচর্য্য-গার্হস্থ্য-বানপ্রস্থ কিংবা সন্ন্যাস যে আশ্রমেই অবস্থান করুন, তাঁকে পৃথিবীদেবী অলঙ্কার-স্বরূপ মস্তকে স্থাপন করে পরমানন্দিতা হন। পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গাদেবী প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের অনুকম্পিত ভজনশীল মহাবৈষ্ণববৃন্দ কে স্পর্শ করে পুলকিত হন। প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের আশ্রিত মহাজন কেউ গুরুর কাজ করেছেন আবার অনেকেই শিষ্যাদি স্বীকার করেন নি। কিন্তু তাঁরা সকলেই আচার্য্য-শ্রেষ্ঠ, রূপানুগ-ভজনসিদ্ধ এবং জগদ্গুরু। তাঁদের ভজন পরিমাপ করবার মানদন্ড বা যন্ত্র আমাদের নিকটে নাই এবং সেই পরিমাপ করার দুঃসাহস আমরা কেউ যেন কখনও না দেখাই। তাঁদের প্রত্যেকেই মহাবদান্য, প্রচারক-শ্রেষ্ঠ এবং ব্রহ্মাণ্ড-তারণকারী।
ব্রহ্মাণ্ড তারিতে শক্তি ধরে জনে জনে।
এ বেদ পুরাণে গুণ গায় যেবা শুনে॥
– মহাজন পদাবলী
জয়ধ্বনি –
সপার্ষদ প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর জয়যুক্ত হৌন!!