শ্রীশ্রীগুরু-গৌরাঙ্গৌ জয়তঃ
দশম-অধস্তন আচার্য্যবর্গের শ্রীচরণে অপরাধ কেন?
একমাত্র গুরু? অথবা সকলেই জগদ্গুরু?
প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের কৃপায় শ্রীভক্তিবিনোদ ধারা বর্তমানে বহু শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে প্রবাহিতা। শ্রীল প্রভুপাদের পতিতপাবন শিষ্যবর্গ কৃপা-পূর্বক অসংখ্য মঠ-মন্দিরাদি এই জগতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ও আপামর জনগণ সেই সকল ভক্তি-সদাচার-প্রচার-কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়ে ধন্যাতিধন্য হয়েছেন। তবে দুঃখের বিষয় এই যে, বর্তমানে কিছু ব্যক্তি - আমাদের আচার্য্যই ‘একমাত্র গুরু’ - এই ভাব পোষণ করে অপরাপর দশম-অধস্তন অভিন্ন-গুরুবৃন্দের শ্রীচরণে অপরাধের সূচনা করছেন। কেউ কেউ অনুধাবন করতে পারছেন না যে - দশম-অধস্তন আচার্য্যবৃন্দ সকলেই গুরুতত্ত্ব, সমান-প্রকাশ, এবং ‘প্রত্যেকেই সর্বশ্রেষ্ঠ ও জগদ্গুরু’।
প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর : নবম অধস্তন চন্দ্র –
নিজসেবকতারকরঞ্জিবিধুং।
বিধুতাহিত-হুঙ্কৃতসিংহবরম্॥
বরণাগতবালিশ-শন্দপদং।
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্॥
প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর, তারকরঞ্জ চন্দ্রের ন্যায় যিনি নিজসেবক-মণ্ডলে পরিবেষ্টিত হ’য়ে তাঁদের চিত্ত প্রফুল্লিত ক’রে থাকেন, ভক্তিদ্বেষিগণ যাঁর হুঙ্কারে বিদ্রাবিত হয় এবং নিরীহ জনগণ যাঁর পাদপদ্ম বরণ ক’রে পরম কল্যাণ লাভ করেন, তাঁকে প্রণাম করি, আমার প্রভুর পদনখজ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি। - পরমপূজ্যপাদ শ্রীগুরুবর শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর গোস্বামী মহারাজ।
দশম-অধস্তন তারকারাজির শ্রেষ্ঠত্ব –
প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের আশ্রিত বা আশ্রিতা, শ্রীরূপানুগ দশম-অধস্তন মহাবৈষ্ণবগণ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র যে বর্ণেই আবির্ভূত হন, ব্রহ্মচর্য্য-গার্হস্থ্য-বানপ্রস্থ কিংবা সন্ন্যাস যে আশ্রমেই অবস্থান করুন, তাঁকে পৃথিবীদেবী অলঙ্কার-স্বরূপ মস্তকে স্থাপন করে পরমানন্দিতা হন। পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গাদেবী প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের অনুকম্পিত ভজনশীল মহাবৈষ্ণববৃন্দ কে স্পর্শ করে পুলকিত হন। প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের আশ্রিত মহাজন কেউ গুরুর কাজ করেছেন আবার অনেকেই শিষ্যাদি স্বীকার করেন নি। কিন্তু তাঁরা সকলেই আচার্য্য-শ্রেষ্ঠ, রূপানুগ-ভজনসিদ্ধ এবং জগদ্গুরু। তাঁদের ভজন পরিমাপ করবার মানদন্ড বা যন্ত্র আমাদের নিকটে নাই এবং সেই পরিমাপ করার দুঃসাহস আমরা কেউ যেন কখনও না দেখাই। তাঁদের প্রত্যেকেই মহাবদান্য, প্রচারক-শ্রেষ্ঠ এবং ব্রহ্মাণ্ড-তারণকারী।
ব্রহ্মাণ্ড তারিতে শক্তি ধরে জনে জনে।
এ বেদ পুরাণে গুণ গায় যেবা শুনে॥
– মহাজন পদাবলী
দশম-অধস্তনের প্রেম-কলহ –
সিদ্ধ-শিরোমণি দশম-অধস্তন বৈষ্ণবগণের মধ্যে প্রেম কলহ কোন সাধারণ জাগতিক দ্বন্দ্ব নয়। দশম-অধস্তন মহাবৈষ্ণবগণের প্রতি তদধীন - একাদশ অথবা দ্বাদশ-ত্রয়োদশ অধস্তন সাধক যদি অপরাধ করেন তবে তা ক্ষমার অযোগ্য।
নিত্যশুদ্ধ জ্ঞানবন্ত বৈষ্ণবসকল।
তবে যে কলহ দেখ, সব কুতূহল॥
– শ্রীচৈতন্যভাগবত / মধ্য / ৫ / ১৩৭
প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের পত্রাবলীতে দেখি - “সকলেরই একই উদ্দেশ্য ও একই সেবাস্বার্থ থাকিলে কোনও প্রকার বিরোধের সম্ভাবনা হয় না। সেখানে আপাতবিরোধও প্রেমপর সেবার উৎকর্ষ-সাধনেই পর্য্যবসিত হয়।”
– পত্রাবলী - শ্রীগৌড়ীয়মঠ, কলিকাতা - ৯ই অক্টোবর, ১৯৩১
প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের আশ্রিত বা আশ্রিতা, শ্রীরূপানুগ দশম-অধস্তন সকলেই প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের প্রকাশমূর্তি। তাঁদের একজনের প্রতিও অবমাননা-রূপ-বিরাগ উপস্থিত হ’লে প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের শ্রীচরণে মহাপরাধ সংঘটিত হবে।
এক হস্তে যেন বিপ্রচরণ পাখালে।
আর হস্তে ঢেলা মারে মাথায়, কপালে॥
– শ্রীচৈতন্যভাগবত / মধ্য / ৫ / ১৪৩
দশম-অধস্তনের প্রতি অপরাধ –
বর্তমানে আমরা বদ্ধভূমিকায় থেকে, এই দশম-অধস্তন মহাবৈষ্ণব-বৃন্দের কারও প্রতি জাগতিক অনুরাগ দেখাচ্ছি এবং অন্য এক বা অনেক আচার্য্যের প্রতি অবমাননা করছি। এই অপরাধ-জনক ব্যবহারে আমরা তাঁদের সকলের প্রতি এবং জগদ্গুরু প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের প্রতি মহা-অপরাধ সংঘটিত করে অনন্ত-কালের জন্য নরকের রাস্তা প্রশস্ত করছি।
আমাদের কেউ যদি মনে করেন যে, স্বয়ং প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের কোন আশ্রিত জন স্বীয় ভজনে সিদ্ধি লাভ করেন নাই, এবং আমরা আমাদের সামান্য সাধনার দ্বারা গোলোকের পরম-প্রেমা প্রাপ্ত করে নেব, তাহলে সেই দুর্বুদ্ধি - প্রথমতঃ দশম-অধস্তনগণের শ্রীচরণে মহা-অপরাধ-বিস্তারকারী এবং স্বীয়-সিদ্ধি-প্রাপন-রূপ-দুরাশাটি বামনের চাঁদ ধরার ন্যায় অলীক-কল্পনা মাত্র।
বিনীত নিবেদন –
মায়িক জগতে একব্যক্তিকে ক্ষুদ্রতর বর্ণনা করে অপর ব্যক্তিকে অধিকতর শ্রেষ্ঠরূপে প্রমাণ করার - এই হেয় বা ক্ষুদ্র-দর্শন বৈকুণ্ঠে নাই। পরমার্থিক জগতের এই পরমবৈষ্ণবগণ সকলেই সর্বশ্রেষ্ঠ। আমাদের বিনম্র নিবেদন এই যে, আসুন আমরা গুর্ব্ববজ্ঞা-রূপ এই চরম-অপরাধ-প্রবণতা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত হ’য়ে, প্রভুপাদ শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের আশ্রিত বা আশ্রিতা, শ্রীরূপানুগ দশম-অধস্তন সকল অভিন্ন শ্রীগুরুমূর্তিগণের শ্রীচরণে সমস্ত অপরাধের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করি ও প্রার্থনা করি, সেই ভক্ত-সামন্তরাজগণ যেন দয়াপরবশ হ’য়ে শুদ্ধ সাধু-প্রেমাকে আমাদের শুষ্ক হৃদয়ে প্রবেশ করিয়ে অমাদের জীবনকে ধন্যাতিধন্য করেন।
জয়ধ্বনি –
সপার্ষদ প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর জয়যুক্ত হৌন!!
দণ্ডবৎ প্রণাম।